বাক্‌ ১৪৭ ।। অন্তর চক্রবর্তী


শীত ও আমি





ঘুমের ধারালো আঙুলে
প্রতিটা ভোর ভুল হয়ে যাচ্ছে বারবার

রাতে ফিরে তাই টানটান জেদ
লড়িয়ে দিচ্ছি জানালায়

আকাশের কতটা আলো
কতটা আঁধার
কতটা পাথর
কতটা আকাশ

এমন বীক্ষণের মাঝেই
নেমে আসছে শীত

ভুল হয়ে যাচ্ছে
ভুল হয়ে যাচ্ছে
প্রতিটা রাত

 

শিয়রে শ্বাস ফেলছে
ঘুমের মতোই তীক্ষ্ণ

                        শূন্যে ভরা ঘড়ি







ফুরসতহীন এক ঝকমকে খবরের অফিসে কাজ করি আমি। যার বেশিদূরে নয় নিঃশ্বাসসর্বস্ব গাছেরা। প্রবল ঘেমেনেয়ে উঠলে লুকিয়ে তাদের নীচে এসে বসি। লোমকূপ ভেদ করে শরীরে সেঁধিয়ে যায় এক একটা সবুজ হিমঘর। কাগজের মতোই জড়িয়ে নেয় ছায়া, ডালপাতাশেকল। দূর বা নীরব। অবাক বা গভীর। সাদা বা লাল। সারাদিনের দাউদাউ মিলিয়ে যায় পাতালে, সেরে নিয়ে চোখের ভাঙচুর। ভয়াবহ উপশমে ফের হয়ে উঠছি খবর ও মাংসের এক অবশ, তুলতুলে নিরস্ত্র মণ্ড। বুঝি, নিস্তার নেই। এ বাড়ন্ত ঋতু উত্তাপের চেয়েও দাঁতাল, নখর। শেষ আয়ুবিন্দু বেয়ে পাতারা ঝরে পড়ার আগেই ছায়া থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসি, ফিনকির আদলে।

গাছেরা সংবাদপ্রতিভূ। তাদের কেবল বন্ধু নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীও ভেবেছি। বা মসীহা। বা প্রতিদ্বন্দ্বী। বা বন্ধু।





দাঁত ছাড়া কামড় অচল

এমনই জানান দেবে
গনগনে মাংসের প্লেট

লোভনীয় সুরুয়ার কাছে
জেনে নাও

ঠোঁট ছাড়া চুমুকের পথ নেই কোনো

শেষমেশ
খুঁজে নিতে হবে
গ্রাসের কবল

যেভাবে সমস্ত
কামড়
চুমুক
ওম
গ্রহ


তোমায়

গিলে ফেলছে অনন্ত





পুতুলের ভোজ
শেষ হতে না হতেই
উড়ে এসে জুড়ে বসছে ভোজবাজি

পাত পেড়ে বসা
তামাম গলিটিকে
ঠাণ্ডা চকোলেটের মতো
তালুতে তুলে নিল ম্যাজিকশাসন

আর্তনাদ থেকে
নিমেষেই হাততালিময়
হয়ে পড়ল যে পথ

তার কোনো শাখা নেই
                         নতজানু
                                পিঁপড়ের দলে
                                       ভিড়ে যাওয়া ছাড়া





রক্ত থেকে নির্বাসন ছিনিয়ে নিল বালক। হেঁটে যাচ্ছে টকটকে পা ফেলতে ফেলতে। ছাপিয়ে এল নাছোড়বান্দা দেহরস। শান্ত গোড়ালিজোড়া উঁকি দিল বাতাসে। শূন্য থেকে মহাশূন্যে। প্রাসাদের বাজখাঁই শ্বদন্ত তার নাগাল হারানোয় যাবতীয় ঝলমল নিভে গেল দপ্ করে। ফিকিরের ওস্তাদ জৌলুসের চোখে বরাবরই অনীহা ঠেলেছে এই ব্রহ্ম। যা যা গুল্ম কৈশোরে পা রাখল এই কালসংঘাতে, শীঘ্রই তাদের শিকড়ে জন্মান্তর জুড়ে নেবে লক্ষাধিক অশ্বভ্রূণ। প্রসবাগার থেকে বিদ্যাপীঠ। লাগামভাঙা এক সহজপাঠে তাদের ডেকে নেবে তৎপর বালকটি।

দৌড়বীর ছন্দে সে মিশে যাচ্ছে হ্রেষাগন্ধী সমর্পণে। দেওয়ালের অসহনীয় ঝোঁকের গলা ফুঁড়ে গজাচ্ছে তেপান্তর...





জলের সামনে
এসে দাঁড়াচ্ছেন আবহবিদ

কী অলীক নির্জনে
থেমে আছে বিকেলের তলপেট

শুকনো অবসাদের মতো
ভেঙে পড়ছে
ভেসে যাচ্ছে
জমে যাচ্ছে

গাছ
পাখি
বাতাস

গুঁড়ো হচ্ছে
উড়ে যাচ্ছে
বয়ে যাচ্ছে
শুকনো অভিধানের মতো

কী অলীক অমসৃণে
থেমে আছে বিকেলের পাঠোদ্ধার

বরফের সামনে
এসে দাঁড়াচ্ছেন আবহবিদ

 

 

3 comments: