বাক্‌ ১৪৭ ।। স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়

 

পত্রাদি

 

 

মা,

আলোমুখি ফুল আবার ফুটেছে দেখো

অন্ধকারে নদী স্রোতের ঝালর মেলছে

খুব চেনা স্বর অনেকটা বাবার মতো

গোল গোল অক্ষর উচ্চারণে পথ চেনাচ্ছে

পথ... ফুরোয় না যা কোনদিন কেবল চলার

হিসেবটুকু চিহ্নের ছাপে ধরে রাখে ফ্রেম সেও কালো

আলোমুখি ফুলের কাছে হেঁটে যেতে গেলে

হোস্টেল পেরিয়ে ঢালু উঁচুনিচু শাসন পেরিয়ে

কোন এক রান্নাঘরের সামনে দাঁড়াতে হবে

বিশ্বাস করো এ মুহূর্ত তা চাইছে না

এতোসব ঠুকঠাক ঝনঝন হুসহাস বাসন

হাঁড়ির ভাত উপচানো বঁটির প্রাগৈতিহাসিক

মিটসেফের দরজায় তালা ও চাবির ঘষাঘষি আদর

ছেড়ে তোমাকে মিস করা ঠান্ডা দেওয়াল চাইছে

 

মিঠাই

 

স্নেহেষু,

বাদামি খামখানা শিয়রে রাখিস

ওর ভেতরেই বীজ জল ও বৃষ্টির মাটি

রাশিফল নক্ষত্র কুন্ডলিপাতা বংশডাল

আটপৌরে মেলা আছে ছাদের দড়িতে শুকোস

সংসার ভালো লাগে না বলে সেই যে তোর বাবা

মাঠ পেরিয়ে চলে গেলো নদীর কাছে তারপর থেকে

রোজ শিয়াল ডাকে মাঠের চৌহদ্দি পেরিয়ে

বাড়ির দিকে আসে অন্ধকারে পাক খায় চোখের জোনাকি

কেমন মাংসগন্ধ পাই নাড়িভুঁড়ি একাকার পচে যাওয়া

রোজ রাতে ঘরের শিকল বাঁধি শিলনোড়া ধুয়ে তুলি হলুদ মশলাসর

পুতুলের ঘর আমার রোজকার সাজানোর পর

সংসার সন্তান ভাগ্যের তাস দেশলাই বাক্স মনে হয়

তোর

মা

 

মা,

বয়ে গেছি পাপড়িও ছিঁড়ে গেছে যাকে তুমি

দেহকান্ড বলো সেই গাছ বিক্ষত জরি

তফাতে নৌকো ভেসে যাচ্ছে মা গো দাঁড় নেই কোন

বৃষ্টিও প্রবল এদিকে নিজেকে ঢাকার মতো খড়কুটো নেই

হাতের তালু পুড়ে যাচ্ছে এ ধারাতে চোখ জ্বলছে

বালির ভেতরেও ক্ষীয়জল ফোঁসফোঁস কান্না উথলায়

ওষধি বলেছিলে ভুলে গেছি মাথা কাজ করছে না আর

এমন বন ও নদীর জঙ্গলে কতো গেছো তুমি

পা ঘষটে ফিরে এসেছো কামড়ের পরে

আবার দুপুরের রোদে বসে এসব রাতের নিদান বলেছো

হাসি পেতো নতুন যৌবন চিলের কেশর

ফড়িং দেখতে গিয়ে তার ডানার অস্বচ্ছ কাটাকুটি

ওড়ার কাঁপনছাতি টের পাইনি

 

মিঠাই

 

আন্তরিকা,

বাজ পড়েছে কাল খুব ঝড় মাতাল

নন্দীদের সুপারির সারি মাথা পেতে আগুন নিয়েছে

সকাল থেকে কেবল ছাই দেখছি বাতাসে

নদীও নেই আর শুকনো শূন্যতা ফ্যালফ্যাল ফোকলা পড়ে আছে

গতরাতে সব জল এ শরীরে ফাঁক ভরিয়েছে

রক্ত এবং শিরায় ঘোলা নদী ছলক ছলক

নদীলগ্ন নদীজন্ম নদীবাস প্রতিটি মেয়ের

তবে কেন ধারণ হবে না? কাদাভাঙা সিঁড়ি রেখে যাচ্ছি

পিছল সেরে কুমিরের খোলস ডিঙিয়ে

সাবধানে উঠিস গাছকৌটো নিয়ে

ইতি

মা

 

মা আমার,

রাতে ঘোর নামে বাবার নামের পাশে

আরও এক নাম যোগ করি নিয়তির মতো

সে হাত ধরে আগলায় আঙুলের বিলি চর খেলে

কিভাবে তাকে বেনিয়ম বলি! বলো তুমি?

একঘর চাবি তালা টিনের বাক্সের ঝুমঝুমি

এসব সরিয়ে আমি ওর কাছে যাই রোজ পুড়ি

ওড় বট অশ্বত্থে দাগিয়ে দিই লাল মানতের সুতো ঢিল

ও এক মন্দির মা গো ও এক দেবতা

ঘোরের ভেতর বাবার নামের পাশে ওর নাম

পুষ্পাঞ্জলি হয় উলু পড়ে রঙ আর ধ্বনি বদলায়

 

মিঠাই

 

প্রিয়তা,

ডাকবাক্সের ভাঁজ লেগে আছে ঘুমের বয়ামে

জেগে থাকা দৃশ্যের টুকরোটাকরা আচার পদ্ধতি

মেনে কী জীবন চলে? অথবা মৃত্যুও? ওহো নিয়ম

সেও নিয়তি ঘাইহরিণ আমাদের বিশদী ইতিহাস

ডুব এবং শ্বাসের মাঝখানে মুহূর্তের শূন্যতা থাকে

সে-ই আকাশ জানিস সে-ই চূড়ান্ত ব্যথা তাকে ছুঁয়েছিস

এবার নৌকো ভাসা আমার নদীতে মাঝির তৈয়ারি

কুনকে মেপে জল তুলিস বাছা চিনে নিস কোন জালে

ঘুনখোর চাঁদ মাথায় রূপো মেখে জাজ্জ্বল্যে আটকে আছে

 

তোর

মা

1 comment:

  1. একটা অদ্ভুত ঘরের ভিতর পথ করলাম কবিতাগুলি। শ্রদ্ধা

    ReplyDelete