বাক্‌ ১৪৭ ।। ধীমান চক্রবর্তী

 


 

ব্যক্তিগত ১৭৫

 

সাবানফেনা স্নানের পর ওয়ালপেপারকে

বিদায় জানায়। ‘ভালো আছি’- বললেই

আজকাল মনে হয়, সে কি মিথ্যে বলছে?

সকালবেলার বৃষ্টি আস্তে ধীরে গিলে নেয়

                              রাস্তার রুলটানা খাতা।

চিতার উপর চিতা সাজানো, বন্দেমাতরম জুড়ে।

অর্ধেক চোখ বন্ধ করে, আগুন এবং অন্ধকার

এসব দেখে। ফিল্ম থেকে হঠাৎ নেমে আসে-

অন্ধকার জানলার সেই মোষ। ঢেকে দেয়

                              বানভট্টের মুখ।

সকালবেলা মাঝেমাঝেই মনে হয় আকাশের

ছেঁড়া সাদাগুলো মেরামত করি। কখনো মনে হয়,

চারুকেশী- চোখদুটোকে হঠাৎ যদি গুলি করতো।

 

 

 

ব্যক্তিগত ১৭৬

 

বাদামি রুটি এবং ব্রা- বিছানায় শুয়ে আছে

দু-এক টুকরো আশ্চর্যর সাথে। এরকম সময়ে

দুঃখ। সামান্য আলো হয়ে উঠতে চায়।

গতরাতে কে যেন হেঁটে গেছিলো রঙের ভিতর।

আর এই সকালবেলা রাত্রিবেলা তুমি কাঁদছো-

                                        অক্সিজের জন্য।

সবুজ চা, লাইজল আর কাটাকুটি খেলা;

বারবার ষোলোকলা চাঁদকে হাসপাতালের

গল্প বলে। আমার ওষুধের ফয়েলে কোনো

কোনো দিন নেমে আসবে বলে রওয়ানা হয়

সূর্য, কোনোদিন ঋতুসংহার।

নেমে আসতে চায় অন্ধকার এক প্রদর্শনীর

                                        লম্বা কালো চুল।

 

 

 

ব্যক্তিগত ১৭৭

 

দুঃখগুলোকে রং করি সকাল-বিকাল।

নীলচে মাস্ক কয়েককলি গেয়ে, রিড চেপে ধরে

হারমোনিয়ামের। নিজের ভেতর থেকে

নিজেই বেরিয়ে আসার জন্য, অন্য কিছু

আজ পর্যন্ত লিখতে পারিনি। সমুদ্রের হলুদ

বালি। শিশুটি নিয়ে এলে তার মা- তিনটে

                              আঙুল তৈরি করে।

লাসের পাহাড় ছুঁয়ে উঁকি মারে চাঁদ।

মধ্যরাতে পাঁচজন পুলিশ এবং বেতাল পঞ্চবিংশতি

ভাবে, সেই চাঁদ কোথা থেকে এলো?

 

টেবলবাতি জ্বেলে হাঁটছে কলকাতা।

গুনগুন করে হাঁটছে আমার অনন্তশয়ান।

 

 

ব্যক্তিগত ১৭৮

 

কাপের মধ্যে সূর্য চমকালে, হেঁটে যাই

বাহান্ন তাসের গোধূলি দিয়ে। বাজারে

অক্টোপাস এবং নাচঘরের ছায়া লম্বা হলে

তুমি রান্না-বইয়ের সামনে গিয়ে শিস দাও।

ঠান্ডা নদীর আলোয় তোমার চুল, এক্কাদোক্কা

                                   খেলা পেখম।

কাকে যেন হাতছানি দেয়। ভাঙা দূরভাষের

পালাগান দেয়। ছাতা মাথায় হেঁটে চলা স্বপ্ন-

কাল সারাদিন হয়ত অক্সিমিটার খুঁজবে।

তুমি ভাবছ, নিরাময়ের আঙুল ধরে,

ট্রামলাইন টপকে দৌড়ে এলো অভিজ্ঞান শকুন্তলা।

দু’মলাটের মাঝখানে দৌড়ে এলো কাঠপেন্সিলে

আঁকা দুঃখী মানুষের ফলকাটা ছুরি, যামিনী

                         এবং অল্প নৌকাডুবি।

 

 

ব্যক্তিগত ১৭৯

 

উড়তে উড়তে একজন চড়াই, লাজুক ওড়না

হয়ে যায়। তখন ছোটবেলার ব্যথা ও

দূরত্বগুলি, খুঁজে পায় হরতনের ভেজা ডাকবাক্স।

তাহলে কি হারানো মেঘদূত, স্নান সেরে

এলো অবেলায়? যদি তোমার পাসওয়ার্ড

‘দুঃখ’ হয়, তবে বালির চরে পুঁতে দেওয়া

সার সার মৃতদেহ দেখতে পাবে। যদি

পাসওয়ার্ড ‘স্বদেশ’ হয়,- তাহলে দেখবে

একজন মহিলা মৃতদেহ একজন পুরুষ মৃতকে

                                        খুব ভালবাসছে।

নাভিতে শূন্য আর ধূসর টপ্পা।

তারা আজ আরশির সামনে থেকে সরিয়ে দেয়

                                হেসে ওঠা অন্ধকার।


8 comments:

  1. হৃদয় ভেদ করা পংক্তিগুলি...

    ReplyDelete
  2. দু মলাটের অন্তর্গত শব্দবাণে ধীমান অনায়াসে ধরাশায়ী করে দিলো - যেমন দেয়।
    অনেক শুভেচ্ছা বন্ধু.

    ReplyDelete
  3. অতিমারীকালীন ভাবনার প্রতিফলন।ভাল লাগলো

    ReplyDelete
  4. অনেকদিন পর ধীমানদার এক গুচ্ছ মন ছুঁয়ে যাওয়া, মনকে ভারাক্রান্ত করা কবিতা পড়লাম।সময়ের শানিত ছুড়িতে বিদ্ধ এই কবিতাগুলি আলোড়িত করলো। ধন্যবাদ ধীমানদাকে, ধন্যবাদ বাক এর সম্পাদক কে।

    ReplyDelete
  5. অনেকদিন পর ধীমানদার এক গুচ্ছ মন ছুঁয়ে যাওয়া, মনকে ভারাক্রান্ত করা কবিতা পড়লাম।সময়ের শানিত ছুড়িতে বিদ্ধ এই কবিতাগুলি আলোড়িত করলো। ধন্যবাদ ধীমানদাকে, ধন্যবাদ বাক এর সম্পাদক কে।

    ReplyDelete
  6. এখনো ধীমানদা কি অসম্ভব লাইন লিখে চলেছেন। প্রত্যেকটি অতুল।

    ReplyDelete
  7. এখনো ধীমানদা কি অসম্ভব লাইন লিখে চলেছেন। প্রত্যেকটি অতুল।

    ReplyDelete
  8. জীবনের জলছবি নয়,একেবারে জীবন্ত।

    ReplyDelete