খসে
পড়ে আফিমের নেশা
বোবাটে
ভঙ্গিমায় হাসছে চাঁদ,চোরাগোপ্তা জোছনায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে অস্থিরতা—
গড়িয়ে আসছে মধ্যরাতে প্লেটভরা ব্যথার মার্বেল,হৃদয়ের
গর্ত আর খানাখন্দে সহসা ঢুকে যাবে উন্মাদ জল;পানপাত্রে ঢেলে
দেবে নীরবতার মৌতাত!আমাকে বেহালার মতো বাজাও— বিরহের
সুরমূর্চ্ছনায় করায়ত্ত করো মৃত্যুতে;দেখো,নির্লিপ্ত এই মন মেনে নিচ্ছে সব আরাধনার ভেতর দিয়ে প্রার্থনাভেদি স্বস্তি—
যে মাহেন্দ্র মুহূর্তে বশীভূত হবে তোমার বিষেভরা প্রেমে!এই জীবন
কসাইখানার চাপাটির কোপে রেখেছে ধৈর্য ও ভোগান্তিরেণু— সেই
অপচয়মুখি প্রেম যূপকাষ্ঠে দিচ্ছে অভিষিক্ত অদ্ভুত অন্ধকার প্রিজমের চোখে দগদগে
দাগ!সতর্ক চোখেও রোদ পালিয়ে যায় বিস্মিত ছায়াস্রোতের গোপনতায়— জীবন এক ঘুড়ি উড়ানো দিন লাটাই সুতার ছুটাছুটি;পুকুরের
জলে ঢিল ছুঁড়ার মতো ঢেউয়ে মিলিয়ে যায়!
কিছু
অজুহাত বসন্ত এলে মেলে ধরি— দুচোখের ব্যথার লালরঙ চোখ থেকে খুলে ঝুলিয়ে
দিই কৃষ্ণচূড়ার ঢালে,তবু নেই প্রেমের পূর্বাভাষ;থমথমে রোদে খসে পড়ে আফিমের নেশা!বাতাসের অঢেল উসকানিতে দূরে সরে যায়
নির্বাক ভাষা— ছায়ার অহমিকায় ভেসে যায় স্মৃতিজাগানিয়া
সিনেট্রি!কৃষ্ণচূড়ার বিভায় হেসে আছে যে বিষাদের প্রেম,সে
প্রেম চোখ থেকে নাও— অগ্নিঝলকে তুলে আনো অক্ষরের
দ্যুতি!প্রলোভন নয়,আড়ালগুলো ঘন করে দেখো— অস্থিরমনোভূমে থির হয়ে আছি আমি!তোমার বিভূতিতে প্রেমের শঙ্খ থেকে ছড়িয়ে দাও
সফেদশ্রুতি প্রেমিকজনমে— আদিম বা বন্য নয়,মানুষের অবয়বে আমি প্রেমিক!
নির্ঘুম
রাতে যে তুমি সুদূর তাকিয়ে আছো ইঙ্গিতময় অনুবাদে,নীলাভ-ম্লান
আকাশের চোখে রেখেছো চোখ,সে তুমি কাছে চলে আসো— ছড়িয়ে দাও দিগন্ত থেকে দিগন্তে গর্ভিনী রোদ;কান্নার
ভাঁজে ভাঁজে হৃদয়ে রাখো দুঃখ এবং আরও কিছু গান!বিছানা,চাদর,বালিশ কী খুব ভিজে যায়— লেগে যায় বুঝি নোনাজলের দাগ?উইন্ডচাইমের শব্দে বুঝি রাখো বিষাদমন্দিরা— আমার
গন্ধমাখা বাতাস খুঁজো বুঝি ঐ ভেজা চোখে?তোমাকে দেয়া সকল
ইশারা ব্যর্থ ও বাতিল হয়ে যায়— নিভে যায় নিঃশেষবিন্দু;লহমায় তলিয়ে যায় চোখ জলের তোড়ে!অথচ প্রেম এক ঝিনুক-বুকের বালির আশ্রয়!
আগুনচুমুতে
ডুবে যাচ্ছে মন
ভাতের
ক্ষুধার মতো খলবলিয়ে ওঠে প্রেম— কোথাও সে নেই,তিরতির করে অনলোজ্জ্বল চোখে মরে যাচ্ছে ছায়ার ভেতর;বিষাদমাঠে
ডুবে যাচ্ছে স্থিরদৃশ্যে রৌদ্রময় শব্দহীন দিন!মূলত প্রেম এক খঞ্জর— প্রেমিকের বুকে বিঁধে যে খুন করে সমাপ্তি অবধি!তীব্র আক্রোশে আয়নায় মুখ
রাখি,এতিম চোখের ভেতর রাখি জলের সাতকাহন— কাহিনীতলের দীর্ঘশ্বাসের এ গোপন কুঁড়ে খায় ধুলো-ওড়া স্মৃতির ফল যেখানে
জীবন থেমে যায় যতিচিহ্ন,কমা ও সেমিকোলনের দ্বন্দ্বে!সময়ের
গালিচা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে যন্ত্রণা-সুন্দর,প্রত্যাখানে যে
শস্যহীন ফুল— নিঃসঙ্গতায় বিমর্ষ উঠোনে পুলকের গান যেন
প্রতিরাতে বেড়ে ওঠা কবরের ঘাস!
বেহাত
হয়ে যাওয়া এই রাত্রি-ও নির্জনে রাখে মানুষের সামষ্টিক প্রেম— প্রকাশ্য গোপন,দৃশ্যমান অদৃশ্যে ফেটে পড়ছে প্রাণের
আলোড়ন,আশার ভোর,উদাসীন বাতাসে যে মেনে
নিচ্ছে নিষ্ঠুরতা,ঋণ,প্রতিশ্রুতি
শোধে!বিচ্যুত হলেই এই মনোযোগিতা গড়িয়ে পড়বে দৃশ্যমানতায়— যে
ক্লান্তি নিবুনিবু আলোয় সুগন্ধী রক্তিম সে ধসে যাবে ভারসাম্যহীন রাত্রির গায়ে!তুমি
ফুটে থাকো প্রেম— নিঃসঙ্গতায় বড় ভয় করে;ও-হৃদয়ে নিও না প্রেমিকের কফিনের ভার!নিশ্চিত ও নিরাপদ নিদ্রাদৃশ্যে কোন
প্রেম নাই— নিথর মুখে থাকে অবহেলা কিংবা তৃপ্তির ছাপ!
অগভীর
জলে ডুবে যাবার নেই ভয়,নেই স্রোতের তোড়জোড়— আলো
দেখেনি যে চোখ সে অন্ধের চোখজোড়া আশ্চর্য সুন্দর!বিষণ্ণচোখ আসমানে শুধু নয়,মাটিতে-ও রাখে নিরীহভাব প্রেমের দুর্ভিক্ষে!তোমার হৃদয়ে জন্মাতে এ জীবনে
বড় সাধ— সর্বগ্রাসী দারিদ্রতায় সে ইচ্ছে মরে যায়নি,হীরার দাগে কেটেছে হৃদয় নিখিল অন্ধকারে!অগণন বিত্তের ভিড়ে ভিখারি হয়ে আছি—
হৃদয় কেটে বানাতে সৌধ প্রীতিহীন নরকে তবু আগুনচুমুতে ডুবে যাচ্ছে মন
ফুলের সুবাসে,ভেসে যাচ্ছি শূন্যে যেন মৃত্যু ছাড়া কোন
জলদর্পণ নেই!
সুদীর্ঘ
যন্ত্রণার পাশে আশ্রয়
মৃত্যুর
মুখ— কথা বলো!রোদ নিভে এলে দীর্ঘ ছায়ার অবুঝ মুখে পৃথিবীর
স্বপ্নেরা উড়ে যায়— হাসনাহেনা ঝরে যাওয়ায় বিমর্ষ দীর্ঘশ্বাসে
আমাকে টানে! তীব্র ডানার অপার স্রোতে যে পাখি চোখে হারালো তার পালকের মায়াবী
ঘ্রাণে বিকেলের আভা সেখানে গোপন করে ঝিনুকবুকে বেদনার রাত!কারা যেন প্রবাহিত করছে
হারিয়ে যাওয়া নাম কবরে,শ্মশানে— মানুষের
বুকে এখন আর প্রেম নেই,প্রত্যূষেই জেগে ওঠা মুখগুলো বড় মৃত
যেন সকরুণ ঘুমাচ্ছন্ন অন্ধকারে কেটেছে সুদীর্ঘ যন্ত্রণায়!কতদিন দেখি নাই বৃদ্ধের
বলিরেখায় কুঁড়ি ফোটার মতো সুখ— কাশবনে পরিপাটি ঢেউ আনন্দ ও
অহংকারে অথচ মিথ্যা সান্ত্বনার ভীড়ে ফ্যাকাশে চোখে বিষম শূন্যতা!
অশ্রু
উবে গেলে ধীরে ধীরে থির হয় আসমান— শৌর্য ও আমোদের বিপরীতে
নির্ভীক আর্তনাদ নীল শিরার ঝাপসায় ছিটকে উঠছে মেঘলা রোদের দিন; নীলিমায় ভেসে থাকা সমুদ্রের ছদ্মবেশী জলদস্যু বিরহে গাঁথছে মালা ব্যর্থ
প্রেমের ফুলে!নিভৃত ধূসরে এ হাওয়াদূত ভৌতিক মুখের পরে' কেন
ঢালো রাতের ভাষা— অতীত ও বর্তমানের শীর্ষ ভেদ করে পাঠাও
পয়গাম অভিষেক-উৎসবের,খাপে রাখো সংশয়-খঞ্জর!
সুদূর
কোথাও ধসে পড়ছে জল— বিমিশ্র যন্ত্রণায় নির্জনে ক্ষয়ে যাচ্ছে
কাঙ্খিত সাহস ও নির্লিপ্ততা যেন দুঃখগোলা জলে প্রেমিকের ক্রন্দন!প্রেমের শীর্ষে
আমাকে ডাকো— ভুল ও কৃতকর্মের অনুশোচনায় উড়াও মেঘ অখণ্ড
পৃথিবীর মানুষের মুখে,মেখে দাও উৎসবমুখর আবীর,তুলে দাও মুখে আহার্য পরম মমতায়— কিছু মানুষ অমানুষ
হয়ে গেলে,মানুষ লজ্জা পায়।মানুষ তার বুক খুঁড়ে রেখেছে দূর
অন্তীম গভীর জলাশয়— নীরবে পোড়ে তবু নিরাশ্রয়ের জন্য রাখে
প্রশান্ত আশ্রয়!
No comments:
Post a Comment